স্বাস্থ্য কথা

সকালে চা পানের উপকারিতা, কোনটি খাবেন – ‘লাল চা’ নাকি ‘দুধ চা’?

সকালে ঘুম থেকে ‍ওঠার পরে শরীরের মধ্যে একধরণের ম্যাচ-ম্যচে ভাব মানে অালসে ভাব থাকে।  পড়াশুনা অথবা কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও শরীরের মধ্যে একটু অালসে ভাব থাকার কারনে কোন কাজে মন বসতে চায় না । এই আলসেমু ভাব টা দূর করার জন্য সকালে এক কাপ চা এর কোন বিকল্প নেই। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক সকালে চা খাওয়ার উপকারিতা  সম্পর্কে।

সকাল বেলা এক কাপ রঙ চা বা লাল চা, সবুজ চা কিংবা আদা চা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যারা চিনি ছাড়া চা খেতে পারেননা তাঁরা চায়ে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করতে পারেন কিংবা খুব অল্প পরিমাণ চিনি দিয়ে চা খেতে পারেন। তবে কোনো ভাবেই খালি পেটে চা খাওয়া উচিত হবে না। সকালে নাস্তা খাবার 15 মিনিট পরে চা পান করবেন। অবশ্য ঘুম থেকে উঠে 1 গ্লাস পানি পান করার 15 মিনিট পরেও চা পান করতে পারেন।

এখন কথা হল দুধ চা খাবেন নাকি রঙ চা?
জার্মানির বারলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১৬ জন মহিলাকে একবার রঙ চা, একবার দুধ চা এবং একবার শুধু গরম পানি পান করতে দেন। প্রতিবার-ই আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতে তাদের রক্তনালীর প্রসারন মাপা হয়। দেখা যায় যে, রঙ চা রক্তনালীর প্রসারন ঘটায় যা উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য অত্যন্ত জরুরী। চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাটেচিন রক্তনালীর প্রসারনের জন্য দায়ী। দুধের মধ্যে থাকে ক্যাসেইন নামক একটি পদার্থ চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাটেচিন কে বাধাগ্রস্থ করে ফেলে। ফলে চায়ে দুধ মেশালে চায়ের রক্তনালী প্রসারনের ক্ষমতা একবারেই চলে যায়। এছাড়াও চায়ে দুধ মেশালে এই ইনসুলিন নির্গমনের হার কমতে থাকে। যদি ৫০ গ্রাম দুধ মেশানো হয়ে, তাহলে ইনসুলিন এর নির্গমন শতকরা ৯০% কমে যায়।

এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক সকালে চা খাবার পাঁচটি উপকারিতা –

১.হার্ট অ্যাটার্ক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করেঃ কোলেস্টেরল ও প্লেটলেটের জন্য শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক ও হার্ট এটাকের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। নিয়মিত চা খেলে ধমনি পরিষ্কার থাকে এবং রক্ত সহজে চলাচল করতে পারে। প্রায় ৫-৬ বছর ধরে করা নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা দিনে ২-৩ কাপ রঙ চা পান করেন তাদের বড় ধরণের হার্ট এটাকের ঝুঁকি যারা চা পান করেন না তাদের তুলনায় ৭০% কম।

২.অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরে ব্যবহৃত হয়ঃ চায়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বার্ধক্যজনিত সমস্যা এবং দূষনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

৩.হাড় রক্ষা করেঃ যারা চা পান করেন এবং যারা করেন না তাদেরকে নিয়ে একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে, যেসব ব্যক্তি প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চা খেয়েছে তাদের হাড়, যারা খায়নি তাদের তুলনায় অনেক বেশি মজবুত আছে।

৪.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ নিয়মিত চা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং বিভিন্ন সংক্রমন থেকে শরীর রক্ষা পায়।

৫.ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ চায়ে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এই দুটি উপাদান শরীরকে ক্যান্সারের ঝুকি মুক্ত করতে সহায়তা করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত রঙ চা পান করলে কোলোন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও অন্যান্য আরো কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। তাই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চাইলে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ রঙ চা পান করা উচিত।

এবার একটু সতর্কতার বিষয়ে বলি-

আমরা অনেকেই হয়ত প্রতিদিন 4-5 কাপ বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ চা পান করে থাকি। আর চা পানের  উপরে বিভিন্ন গবেষণা এটাও বলছে যে, বেশি চা পানে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি না থাকলেও বারবার চা পান করতে গিয়ে আপনি যে মাত্রায় চিনি গ্রহণ করছেন সেটা কিন্তু বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে! তাই যাদের অভ্যাস আছে সারাদিনে বেশ কয়েকবার চা পান করার, তাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে চা-তে চিনির পরিমাণটা যেন একেবারেই কম থাকে।

এছাড়া খাওয়ার  আগে চা পান করলেও হজমে বাঁধাগ্রস্থ হয় এবং খাবার থেকে প্রয়াজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায় না। তাই খাবার খাওয়ার অন্তত: আধা ঘণ্টা আগে অথবা খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে চা পান করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button